,

‘ভবনে আগুন লেগেছে, আমার জন্য দোয়া করো’

লিয়াকত হোসেন লিংকন:‘আমাদের ভবনে আগুন লেগেছে। এই মুহূর্তে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। এখান থেকে বেরুতে পারবো কি না জানি না। আমার জন্য দোয়া করো।’

জীবনের শেষ সময়ে পারভেজ মৃধা সাজ্জাদ (৪৬) তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে মোবাইল ফোনে কথাগুলো বলছিলেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সময় দুপুর ১ টার দিকে স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয় সাজ্জাদের। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের বলুগ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে সাজ্জাদ। তিন ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সাজ্জাদ। ছোট ভাই পারভেজ খসরু একটি কলেজের শিক্ষক।

তিনি ওই টাওয়ারের ১১ তলায় অবস্থিত কার্গো পরিবহন কোম্পানি স্ক্যানওয়েল লজিস্টিকসের সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন সাজ্জাদ। একমাত্র ছেলে সিয়াম ও স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন তিনি। সিয়াম রাজধানীর মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

নিহতের স্বজনরা জানান, ঘটনার সময় পারভেজ মৃধা সাজ্জাদ জোহরের নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় আগুন দেখে জীবনের শেষ সময়টুকু স্বজনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। আগুন থেকে জীবন বাঁচতে ডিশলাইনের কেবল বেয়ে নামার চেষ্টা করতে গিয়ে পড়ে যান সাজ্জাদ। ১১ তলা থেকে ৭ তলা পর্যন্ত নেমে এসির বক্সের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে মারা যান।

বৃহস্পতিবার বিকালে সাজ্জাদের মৃত্যুর খবর গোপালগঞ্জের বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। গোটা এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।

নিহতের ছোট ভাই পারভেজ খসরু বলেন, দুপুরে ভাইয়ের সাথে কথা বলার পর তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিকালে এক লোকের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে মৃত্যুর খবর আমরা পাই। এরপর বনানীর ১৫ নং রোডে অবস্থিত বনানী ক্লিনিকের বারান্দায় লাশ পড়ে থাকতে দেখি।

তিনি আরো আগুন লাগার পর ওই ভবনের ১১ তলা থেকে ডিশের কেবল ধরে নামতে গিয়ে আমার ভাই নিচে পড়ে যায়। এতে তার মৃত্যু হয়। সাজ্জাদ এ মাসের ২৫ তারিখে সৌদি আরব থেকে ওমরাহ হজ্জ্ব পালন করে দেশে ফিরেছেন।

শুক্রবার সকাল ১০ টায় নিজ গ্রামে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

বলুগ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ কুদ্দুস মৃধা বলেন, ‘সাজ্জাদ একজন অমায়িক মানুষ ছিলেন। সে খুবই ধার্মিক ও দানশীল ছিলেন। এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসায় উন্নয়নে ব্যাপক অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন। তার মৃত্যুতে আমরা গোটা এলাকাবাসী শোকার্ত।’

এই বিভাগের আরও খবর